ম.ম.রবি ডাকুয়া,বাগেরহাটঃ
উপকূলিয় সাগর ও নদী এলাকায় ইলিশ ধরার এক নিষেধাজ্ঞা শেষ হতে না হতেই আরেক নিষেধাজ্ঞার মুখে সুন্দরবন ও মোংলার জেলেরা। মা ইলিশের পর এবার জাটকা সংরক্ষণে পহেলা নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত শুরু হচ্ছে আট মাসের আরেক নিষেধাজ্ঞা।
২০২৫ সালের ঘোষিত জাটকা ধরা, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ থাকবে ১ নভেম্বর ২০২৪ থেকে ৩০ জুন ২০২৫ পর্যন্ত। এর আগে, ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত মা ইলিশ সংরক্ষণের জন্য একটি বিশেষ অভিযানও পরিচালিত হয়েছিল।
এ অবস্থায় বিকল্প কর্মস্থান অথবা পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা চান চরম বিপাকে পড়া উপকূলের জেলেরা। এদিকে জাটকা সংরক্ষণ অভিযানে নদীতে কঠোর অবস্থানে থাকবে কোস্টগার্ড।
প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় গত ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের সব অভয়ারণ্য ও সাগরে নিষেধাজ্ঞা ছিল। ২৫ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে নদীতে জাল ফেলতে পারছেন জেলেরা। তবে এক নিষেধাজ্ঞা শেষ হতেই পাঁচদিন পর শুরু হচ্ছে আট মাসের জাটকা ধরায় আরেক নিষেধাজ্ঞা। পহেলা নভেম্বর থেকে ৩০ জুন দেশের সব নদী ও সাগরে জাটকা ধরা নিষেধ। ২৫ সেন্টিমিটারের কম আকারের কোনো ইলিশ ধরলেই তাকে আইনের আওতায় আনা হয়।
এ অবস্থায় মোংলা ও সুন্দরবন উপকূলের জেলেরা বলছেন, অক্টোবরের নিষেধাজ্ঞায় তারা সঠিকভাবে সাহায্য পাননি। জাটকা সংরক্ষণের নিষেধাজ্ঞায় আগামী আট মাসের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তার দাবি তাদের।
মোংলা উপকূলের জেলে বিদ্যুৎ মন্ডল বলেন, ‘আমাদের জীবিকার একমাত্র পেশা নদীতে মাছ ধরা। কিন্তু এক নিষেধাজ্ঞা শেষ হতেই আরেক নিষেধাজ্ঞা আসছে। এখন কীভাবে চলব। আমাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে চলতে খুব কষ্ট হবে। সরকার যেন যে কোনো নিষেধাজ্ঞায় বিকল্প কর্মসংস্থান অথবা পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা দিলে ভালোভাবে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকা যায়’।
চাঁদপাই ইউনিয়নের কানাই নগর এলাকার জেলে শাহাজাহান ফকির বলেন, ‘গত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার খাদ্য সহায়তা এখনও পাইনি। ২৫ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও এখনও দেয়নি। মোংলা উপজেলা মৎস্য অফিসে যোগাযোগ করেছি-তারা বলেছে দিবে। কবে দিবে তা বলেনি। এর মধ্যে আবার নিষেধাজ্ঞা আসছে, তার খাদ্য সহায়তা আদৌ পাব কিনা বলতে পারছি না’।
বাদল হাওলাদার নামে জয়মনি এলাকার জেলে বলেন, ‘মাছ ধরার একটা ট্রলার বানাতে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা খরচ হয়। জাল-দড়ি বানাতে খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা’।
এছাড়া অন্যান্য খরচও আছে উল্লেখ করে এই জেলে আরও বলেন, ধার দেনা করে বিগত দিনে চলেছি। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে পশুর নদীতে নেমে ইলিশ যা পেয়েছি, তা খুবই ছোট এবং কম। এ দিয়ে সংসার চালাব নাকি দেনা পরিশোধ করব। এর মধ্যে আবার নিষেধাজ্ঞা। এ অবস্থায় পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা না দিলে না খেয়ে মরে যেতে হবে।
উপজেলা মৎস্য বিভাগ বলছে, ইলিশের উৎপাদন বাড়াতেই আট মাসের নিষেধাজ্ঞার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এ নিষেধাজ্ঞা চলাকালে জেলেদের ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় চাল দেওয়া হবে বলে জানান মোংলা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, জাটকা সংরক্ষণের জন্য এবং পরবর্তীতে বড় ইলিশে রূপ পায় সেজন্য একটু সময় দিতে হয়। তাই প্রতি বছরের মতো এবারও ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সরকার আট মাসের নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে। এই নিষেধাজ্ঞাকালীন বাংলাদেশের যত খাল ও সাগর আছে সব প্রকার জাটকা আহরণ, বিক্রয়, মজুদ পরিবহন ও বাজারজাতকরণ কঠোরভাবে বন্ধ থাকবে। তবে এই আট মাসে জেলেদের জন্য ৮০ কেজি করে দুই দফায় খাদ্য সহায়তা হিসেবে চাল দেওয়া হবে।
এছাড়া গত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময়ে যারা চাল পায়নি তাদেরকে চাল দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। খুব শিগগিরই তারা সে চাল পেয়ে যাবেন।
এদিকে জাটকা ইলিশ সংরক্ষণের অভিযানে নদী ও সাগরে কঠোর অবস্থানে থাকবে উল্লেখ করে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের (মোংলা সদর দপ্তর) অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবরার হাসান বলেন, জাটকা নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে তারা কঠোর অভিযান চালাবে। জাটকা রক্ষায় সুন্দরবন সংলগ্ন সব নদী এবং সাগরে প্রতিনিয়ত তাদের টহল জোরদার ছাড়াও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হবে বলেও জানান তিনি।





