নিউজ ডেস্কঃ(চট্টগ্রাম, বাঁশখালী প্রতিনিধি)
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জনবান্ধব, অভিনব ও ব্যতিক্রম একটি কাজ এই আশ্রয়ণ প্রকল্প। মূলত ভূমীহীনদের পূনর্বাসনের জন্য এই প্রকল্প দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, চট্টগ্রাম, বাঁশখালী ৩নং খানখানাবাদ ইউনিয়নের সেন্টার পুকুর পাড়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ২৬টি বাড়ি নির্মাণ হচ্ছে। এই প্রকল্পকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নির্মাণ কাজে ব্যাবহার করা হচ্ছে নিম্ন মানের লবণাক্ত বালু,রড়, সিমেন্ট। বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে জানা যায়, বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব সাইদুজ্জামান চৌধুরী ৩নং খানখাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বদরুদ্দীন চৌধূরীর সাথে বিশেষ সখ্যতা থাকায় তাকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান চৌধুরীর নির্দেশে ওই ২৬টি বাড়ির অলিখিত ঠিকাদারির দায়িত্ব দেন। কিন্ত চেয়ারম্যান বদরুদ্দীন চৌধুরী ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ত থাকার দরূন স্থানীয়ভাবে উক্ত প্রকল্প দেখভালের দায়িত্ব দেন ৩নং খানখানাবাদ ইউনিয়নের বি এন পি নেতা মো: ইউসুফ, ফজু, শামসু ও ডাকাত আলমগীর কে (বিভিন্ন মামলায় জেল খাটা আসামী)। এদিকে প্রকল্পের কাজ চলাকালীন সময়ে লবণাক্ত বালু,নিম্ন মানের রড ও সিমেন্ট ব্যবহার কিছু স্থানীয় সচেতন মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়। ০২/০৩/২০২২ তারিখে উক্ত আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘর বরাদ্দপ্রাপ্ত ভূমীহীন নবী হোসেন লবণাক্ত বালু,নিম্ন মানের রড ও নিম্ন মানের সিমেন্ট ব্যবহারের বিষয়ে প্রতিবাদ করলে মো: ইউচূফ,ফজু,শামসু ও ডাকাত আলমগীরের বাহিনী কর্তৃক রাত নয়টার সময় মারধরের স্বীকার হয়। পরবর্তীতে ভূক্তভোগী নবী হোসেন এই বিষয়ে স্থানীয় মান্যগণ্য ব্যক্তিদের কাছে উক্ত ঘঠনার বিচার চাইলে তারা বিচার করার আশ্বাস দেয় এবং ০৩/০৩/২০২২ সকালে বিচারের দিনক্ষণ ঠিক হয়। উপস্থিত স্থানীয় জনগণ অভিযোগ করে বলেন, পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী নবী হোসেন বিচারের জন্য গেলে আগে থেকে উৎপেতে থাকা চেয়ারম্যান বদরুদ্দীনের পেটুয়াবাহিনী ইউসুফ,ফজু, শামসু ও ডাকাত আলমগীরের বাহিনীরা স্থানীয় গন্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গের উপর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে। উক্ত হামলায় আহতরা হলেন মোহাম্মদ মিরাজ (২৭) পিতা আবু তালেব, জাহাঙ্গীর (৩৬) পিতা মৃত রফিক আহমদ, নেজাম উদ্দীন (৪০) পিতা ছিদ্দিক আহমদ, আবু তালেব (৭০) পিতা মৃত ছিদ্দিক আহমদ, নবী হোসেন (৪৫) পিতা মৃত লাশু মিঞা। আহত ব্যক্তিরা বর্তমান চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে।
এদিকে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব সাইদুজ্জামান চৌধুরী এবং প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ রিয়াদ হোসেন উক্ত ব্যপারে অবগত হয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং পুলিশ প্রহরায় স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সাথে কথা বলেন। সেই সময় নবী হোসেন, খোরশেদ আলম উপস্থিত কর্মাকর্তাদের চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, এসব পিলারে ৬ ইঞ্চির পরিবর্তে ৯ ইঞ্চি দূরত্বে লোহার খাঁচা ব্যবহার করেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক পিলার ভেঙ্গে সত্যতা প্রমাণ পান।
এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব সাইদুজ্জামান চৌধুরী উক্ত প্রকল্পের কাজ নতুনভাবে শুরু করার জন্য নতুন মিস্ত্রি নিয়োগ করেন। কিন্তু যে লবণাক্ত বালু,নিম্ন মানের রড ও সিমেন্ট নিয়ে ঘটনার উদ্ভব হয় সেই বিষয়টি চেঁপে যান যা গঠনাস্থলে উপস্থিত বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা বাঁশখালী উপজেলা শাখার সভাপতি মাহামুদুল ইসলাম বদির দৃষ্টিগোচর হয় এবং তিনি সাথে সাথে তার প্রতিবাদ জানান। এ সময় তিনি উপস্থিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব সাইদুজ্জামান চৌধুরী ও স্থানীয় জনগনের সামনে বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার এই প্রকল্পের কাজের দায়িত্ব ডাকাতদের কেন দেওয়া হলো এবং স্থানীয় রাঘববোয়ালরা কেন লবণাক্ত বালু,নিম্ন মানের রড ও সিমেন্ট ব্যবহার করেছে তার কৈফিয়ত জনগণের কাছে দিতে হবে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় চেয়ারম্যান বদরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, মো. ইউসুফ, ফজু, শমশু ও ডাকাত আলমগীর আমার বাহিনী নয়। তাদের সাথে নবী হোসেনদের সাথে আগে থেকে বিরোধ ছিলো। ওই বিরোধের রেশ ধরে হামলার ঘটনা হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পে কোন দুর্নীতির বিষয় নয়। দুর্নীতি না হলে ইউএনও কেন ঘরের পিলার ভেঙে লোহার রড উঠিয়ে নিলেন ? ঐই প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান মো. বদরুদ্দিন চৌধুরী কোন সদুত্তর দেননি।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে পিলার ভেঙে লোহার রড উঠিয়ে নিয়েছি। কাউকে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুর্নীতি করতে দেয়া হবে না।
বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক আবু জাফর মো. শাহ আলম বলেন, সকালে হামলার পর পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে পরিস্থিতি শান্ত।