মুহাম্মদ শাহাদাৎ হোসাইনঃ
বন্দর নগরীর বড়পোল মোড়ে জাতির পিতার ভাস্কর্য ‘বজ্রকণ্ঠ’।
বন্দর নগরীতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যগুলোসহ বিভিন্ন ভাস্কর্যের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ।
হেফাজতসহ কয়েকটি ইসলামী সংগঠনের বিরোধিতা এবং কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রেক্ষাপটে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নয়টি ভাস্কর্য আছে। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি স্থানের দেয়ালে এবং আলাদা স্থানে মুর্যালও আছে।
চট্টগ্রামের নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (বিশেষ শাখা) আব্দুর ওয়ারিশ মিডিয়াকে বলেন, “সেগুলোর নিরাপত্তায় সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি পুলিশের পক্ষ থেকে সিসি ক্যামেরা লাগানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
“নগরীর বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত ভাস্কর্যগুলোর আশেপাশে সিসি ক্যামেরা আছে। তবে ভাস্কর্যগুলো আরও পরিষ্কারভাবে দেখার জন্য সেগুলোর পাশে ক্যামেরা নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।”
গত ১৩ই নভেম্বর ঢাকার গেণ্ডারিয়ার ধূপখোলার মাঠে ‘তৌহিদী জনতা ঐক্যপরিষদের’ ব্যানারে এক সমাবেশ থেকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করা হয়।
একই দিনে রাজধানীর বিএমএ অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মামুনুল হক প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করেন।
গত ২৭শে নভেম্বর চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার পার্বতী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আল আমিন সংস্থা আয়োজিত তিন দিনের তাফসীরুল কুরআন মাহফিলের সমাপনী দিনে বক্তা হিসেবে অংশ নেওয়ার কথা ছিল মামুনুল হকের। তবে ছাত্র ও যুবলীগ তাকে প্রতিরোধের ঘোষণা দেওয়ার পর উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে তিনি আর আসেননি।
ওই মাহফিলে হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী হুমকি দেন, যে কোনো দল ভাস্কর্য বসালে তা ‘টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেওয়া’ হবে।
তাদের বিরোধিতার মধ্যে গত ৪ই ডিসেম্বর রাতে কুষ্টিয়া পৌরসভার পাঁচ রাস্তার মোড়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের অংশ বিশেষ ভেঙে ফেলা হয়। এতে জড়িত অভিযোগে দুই মাদ্রাসা শিক্ষক ও দুই মাদ্রাসা ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কুষ্টিয়ার মতো কোন নাশকতার ঘটনা যাতে চট্টগ্রামে না ঘটে সে ব্যাপারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর কথা জানান চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মেহেদী হাসান।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের পাশাপাশি সামাজিক ঐতিহাসিকসহ সকল ভাস্কর্যের নিরাপত্তা বিধান করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
উপ-কমিশনার মেহেদী হাসান বলেন, “যারা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী না এবং যারা দেশকে মৌলবাদ ও ইসলামীকরণ করতে চায় এসব প্রতিক্রিয়াশীলদের ব্যাপারে ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি শুরু হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা যাতে চট্টগ্রামে ঘটতে না পারে সে জন্য পুলিশী তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।”
এদিকে যেসব প্রতিষ্ঠানে ভাস্কর্য আছে সেগুলোর কর্তৃপক্ষের সাথেও পুলিশ যোগাযোগ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের প্রক্রিয়ার কথা জানান তিনি।