ইমতিয়াজ উদ্দিন সিফাতঃ
বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় টি হলো এইসএসসি পরীক্ষা কবে হবে !
দেশের ১৩লাখ ছাত্র-ছাত্রী আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে জীবন যাপন করছে, এমন সময়ে বিভিন্ন রকম মতামত এবং বক্তব্যের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা রীতিমতো দ্বিধায় পড়ে গিয়েছে।
যদিও দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলা হচ্ছে কিন্তু ১৭ আগস্ট বাংলাদেশে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ২৫৯৫ এবং মৃত্যুবরণ করেছে ৩৭ জন,
১৮ আগস্ট ৩২০০ জন আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যুবরণ করেছে ৪৬ জন। অর্থাৎ পরিস্থিতি ভালোর দিকে যাচ্ছে এ কথা বলা উচিত নয়।
ইতোমধ্যে শিক্ষাসচিব বলেছেন,
“১৪ দিনের নোটিশে পরীক্ষা হবে,
এর জন্য স্কুল-কলেজ খোলা জরুরী নয়। ২৫ তারিখের পর এ বিষয়ে ফাইনাল সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে”
অন্যদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান “স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেন্দ্র বাড়িয়ে পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি চলছে”
এমতাবস্থায় সংক্রমণ হার কিন্তু ঠিক ই ২০-২২% রয়েই যাচ্ছে।
অর্থাৎ বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক মোটেও হয়নি।
পরীক্ষা নেয়ার বিষয় টি উঠতেই ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘করোনার মধ্যে এইসএসসি নয়’ নামক গ্রুপে পরীক্ষা না নেয়ার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের নানান যুক্তি ও কারণ উঠতে শুরু করেছে।
৪ দিনেই গ্রুপটিতে ১ লাখ ২৫ হাজার মেম্বার ছাড়িয়ে গিয়েছে।
সকল শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি একটাই, ‘করোনা পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নয়’।
দেশের বিভিন্ন শীর্ষ স্থানীয় কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায় ছাত্র-ছাত্রীরা আতংকের মধ্যেই আছে,
তারা এমন ভয়ভীতির মধ্যে পরীক্ষা দিতে নারাজ।বিষয়টি নিয়ে ‘করোনার মধ্যে এইসএসসি নয়’ গ্রুপে বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা তাদের অসুবিধা এবং করোনার ক্রান্তিলগ্নে পরীক্ষা হবার ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে ভিডিও,পোস্ট এর মাধ্যমে দাবি জানাচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা বলছে পরীক্ষাকেন্দ্রে
স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হলেও, কেন্দ্রের বাইরে এবং গণপরিবহনে তা কখনোই সম্ভব নয় কারণ প্রতিনিয়ত গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠছে।
শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দাবি হল,করোনাকালীন এইসএসএসি পরীক্ষা হলে ১৩ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে কতজন যে আক্রান্ত হবে তার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবেনা। তাছাড়া কেউ আক্রান্ত হয়ে যদি পরীক্ষা দিতে না পারে তার ১ টি বছর নষ্ট। একজন ছাত্র ১২ টি বছর ধরে কষ্ট করে এসেছে, সবার স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষা এ পরীক্ষা নিয়ে।
এ পরীক্ষায় একজনের ক্যারিয়ার নির্ধারণ করে, যদি কেউ এক পরীক্ষা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়ে পরীক্ষায় দিতে না পারে তবে তার শিক্ষাজীবনের মূল্য টা কোথায়।
একজন শিক্ষার্থী ও যদি আক্রান্ত হয় তার মাধ্যমে তার পরিবার ঝুঁকিতে থাকবে। পরীক্ষা দিতে গিয়ে একজন শিক্ষার্থীর ও যদি জীবন বিপন্ন হয় তবে তার দায়ভার কে নিবে তা সময়ের প্রশ্ন এখন !
একজন শিক্ষার্থী ও যদি আক্রান্ত হলে তার মাধ্যমে অন্য শিক্ষার্থীদের ও আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েই যায়। এসব রিস্ক ফেক্টর গুলোকে কিভাবে দেখা হবে তা প্রশ্ন রয়ে যায় !
এছাড়া ১৩ লাখ শিক্ষার্থীর পরিবার ও ঝুঁকিতে থাকবে যদি পরীক্ষা নেয়া হয় করোনার এ পরিস্থিতিতে। এখন পর্যন্ত একটি ব্যাপার নিশ্চিত যে করোনার ভয়াল থাবায় শত শত পরীক্ষার্থী তাদের পরিবারের সদস্যদের হারিয়ে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছে,এমন অনেক পরিবার ই আছে যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। হয়তো তারা এমন পরিস্থিতিতে তাদের ঘরের ছেলে কেও হারাতে চান না !
জীবন যেখানে অনিশ্চিত সেখানে একটি পরীক্ষা দিতে গিয়ে এত ছাত্রের জীবন বিপর্যয়ে ফেলতে কোন পরিবার ই চান না। এখন কিভাবে পরীক্ষার্থীরা মানসিক ভাবে প্রস্তুত হবে ?
এখন দেশের অনেক এলাকা বন্যার পানিতে কবলিত, সেসব এলাকার শিক্ষার্থীরা কিভাবে তাদের পরীক্ষা প্রস্তুতি নিবে। যেখানে তিন বেলা খাবার ই জুটাতে পারছেনা তারা।
অনেক পরীক্ষার্থীর মধ্যবিত্ত পরিবার শহরে থাকতো, এ ক্রান্তিলগ্নে তারা শহর ছেড়ে গ্রামে পাড়ি জমিয়েছে, তারা এখন অর্থনৈতিক বিপর্যয় এর সম্মুখীন তারা এ মূহুর্তে কিভাবে পরীক্ষা দিবে শহরে এসে ?
এছাড়াও অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখার দাগিতে গ্রাম ছেড়ে শহরে হোস্টেল বা ম্যাচে থাকতো, তারা বর্তমানে তাদের বাসা বা হোস্টেল ছেড়ে দিয়ে গ্রামে চলে গিয়েছে। আকস্মিক সিদ্ধান্ত নেয়া হলে তারা কিভাবে এ ধাক্কা সামলে নিবে ? তাদের একটা নির্দিষ্ট সময়ের দরকার।
দেশের বড় একটা অংশ এ মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থী। তাই তাদের কথা ও ভাবতে হবে।
পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীরা নোটিশ এর ব্যাপারে অন্তত ১ মাস সময় চায় যাতে তারা মানসিক ভাবে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে পারে।
পরিশেষে ১৩ লাখ শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবি করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নয়।
করোনা ভীতি কাটিয়ে উঠে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই তারা পরীক্ষা দিতে চায়।
শিক্ষার্থীরা বলছে জীবন এবং শিক্ষা দুটোই মূল্যবান, কিন্তু পরীক্ষা দিতে গিয়ে জীবন চলে গেলে সে শিক্ষার মূল্য টাই বা কোথায়।
১৩ লাখ শিক্ষার্থীদের দাবি এমন পরিস্থিতিতে পরীক্ষা না নিয়ে সুস্থ ও স্বাভাবিক পরিবেশে পরীক্ষা হোক। সবাই যেখানে নিশ্চিন্তে পরীক্ষা দিবে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি হোক।