নিউজ ডেস্কঃ
শুক্রবার বিকেলে বাঁশখালীর প্রবেশদ্বার তৈলারদ্বীপ সেতু থেকে যে মোটরবাইকের স্রোত শুরু হয়েছিল, তা সন্ধ্যা নাগাদ উপজেলা সদরে এসে রূপ নেয় এক বিশাল জনসমুদ্রে। এই শোডাউনের কেন্দ্রে ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান আশিক। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আয়োজিত এই বিশাল সমাবেশ কেবল শক্তি প্রদর্শনই ছিল না, ছিল তার রাজনৈতিক জীবনের ত্যাগ, ক্ষোভ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার এক জোরালো ঘোষণা।
বাঁশখালী পৌর সদরের পথসভায় দাঁড়িয়ে সাবেক এই ছাত্রনেতা মফিজুর রহমান আশিক যখন কথা বলছিলেন, তখন তার কণ্ঠে ছিল একাধারে দৃঢ়তা ও প্রতিশ্রুতি। তিনি বলেন, তাকে দিয়ে কোনো অনৈতিক কাজ হবে না। বেড়িবাঁধের টাকা লুটপাট কিংবা বালু উত্তোলনের অর্থ আত্মসাতের মতো কর্মকাণ্ডে তিনি জড়াবেন না। তিনি বাঁশখালীর মানুষকে কথা দেন, তার সময়ে কেউ অন্যের জায়গা দখল করতে পারবে না এবং ইয়াবা ব্যবসার কোনো সুযোগ থাকবে না।
তার ক্ষোভের মূল লক্ষ্য ছিলেন বাঁশখালীর সাবেক দুই সংসদ সদস্য। মফিজুর রহমান আশিক প্রশ্ন তোলেন, কেন তাদের এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। তিনি বলেন, “বিনাভোটে এবং মিডনাইট ভোটে নির্বাচিত এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ফ্যাসিস্ট আমলে বাঁশখালীতে আওয়ামী ত্রাসের রাজত্ব, লুটপাট আর মাদকের সাম্রাজ্য স্থাপন করেছিল। আর চব্বিশের ডামি ভোটে নির্বাচিত এমপি মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের ডোনার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার নির্দেশে বাঁশখালীর চাম্বল বাজারে ছাত্রদের ওপর গুলি চালানো হয়েছিল। তাদেরকে কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না?”
মফিজুর রহমান আশিক তার বক্তব্যে নিজের ওপর ঘটে যাওয়া নির্মম নির্যাতনের কথাও তুলে ধরেন। তিনি জানান, এই দল করতে গিয়ে তিনি দুইবার গুমের শিকার হয়েছিলেন। গুমের পর তাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হাত, কোমর ও হাঁটু ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, “ওরা আমাকে জেলে দিতে চাচ্ছিল না। সিটিসিসি আমাকে আবার গুম করার চেষ্টা করেছিল, আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল।” সেই দুঃসময়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মীদের ভূমিকার কারণে তিনি মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে এসেছেন বলে উল্লেখ করেন।
হাসিনা সরকারের পতনে নিজের ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন মফিজুর রহমান আশিক। তিনি জানান, জুলাই বিপ্লবের সময় তিনি মাঠে থেকে লড়াই করেছেন এবং আহত হয়েছেন। তিনি ছাত্র সমন্বয়কদের সাথে মার্কিন দূতাবাসের মানবাধিকার কর্মকর্তা ও সাংবাদিক মুশফিক ফজল আনসারীর সংযোগ স্থাপন করে দেন। এমনকি, ৫ আগস্টের পর ড. ইউনূসকে সরকারপ্রধান করার জন্য তিনি এবং মুশফিক ফজল আনসারী ছাত্র সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদকে প্রস্তাব করেছিলেন।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার কার্যক্রমের কথাও তিনি তুলে ধরেন। মফিজুর রহমান আশিক বলেন, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) মানবাধিকার কর্মী জুলিয়া ব্লেকনারের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের গুম ও গ্রেপ্তার নিয়ে কাজ করেন। তার দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই এইচআরডব্লিউ বিএনপির ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। ডামি নির্বাচনের ভোট কারচুপির ভিডিও তিনি সাংবাদিক মুশফিক ফজল আনসারীর মাধ্যমে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে সরবরাহ করেছিলেন।
একইসাথে তিনি জামায়াতকে ইঙ্গিত করে বাঁশখালীকে শান্ত রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কোনো ইসলামি সংগঠন যদি তাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে, তবে তা প্রতিহত করার মতো যথেষ্ট শক্তি তাদের রয়েছে।
সবশেষে, দলের কাছে নিজের প্রার্থিতার যৌক্তিকতা তুলে ধরে এক প্রকার হুঁশিয়ারি দেন মফিজুর রহমান আশিক। তিনি বলেন, তার ত্যাগ, মেধা ও যোগ্যতার মূল্যায়ন দল করবে বলে তিনি আশাবাদী। কিন্তু তাকে না জানিয়ে বা তার ত্যাগের মূল্যায়ন না করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে, তিনি জেনারেশন জি-এর প্রতিনিধি হিসেবে দক্ষিণ বাঁশখালী থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। তিনি বলেন, “আপনারা সবাই মিলে উত্তর বাঁশখালী ইজম করতে চাচ্ছেন, এটা আমি কখনো মানব না।”
এই ঘোষণার মাধ্যমে তিনি বাঁশখালীর রাজনীতিতে এক নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত দিলেন। সমাবেশ শেষে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র বিনির্মাণে ৩১ দফা সম্বলিত লিফলেট সাধারণ মানুষের মাঝে বিতরণ করেন।