বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়নের আবদুল্লাহর দোকান এলাকায় নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করায় পল্লী চিকিৎসকের চেম্বারে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গত ১৫ জুন ইউপি নির্বাচনের পরের দিন ঘটনাটি ঘটলেও মামলা হয়েছে ৪দিন পর। আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামাল উদ্দিনকে নির্দেশ দিয়েছেন। যার মামলা নং-৭১২।
সোমবার (২০ জুন) বাঁশখালী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম হারুনুর রশীদকে প্রধান আসামি করে ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন ভুক্তভোগী পল্লী চিকিৎসক রহিমা বেগমের স্বামী মো. সাগর। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় আজ মঙ্গলবার।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ছনুয়া ৭নম্বর ওয়ার্ডের সালাম বলীর বাড়ির মোস্তাক আহমদের পুত্র এম হারুনুর রশীদ (৫৫), তার সহোদর আলমগীর কবির (৪৫), খোরশেদ আলম (৪৬), আবদুল আজিজ টিপু (৩২), এম. হারুনুর রশীদের পুত্র মো. শরীফ (২৩), একই এলাকার মৃত বশির আহমদের পুত্র হেফাজতুল ইসলাম (৪০), র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত বাহাদুর ইসলাম প্রকাশ বাহাদুর ডাকাতের পুত্র এমদাদুল ইসলাম (২৫), মৃত কালু সওদাগরের পুত্র ইউসুফ মাঝি (৫০), নুরুল আমিনের পুত্র মিজানুর রহমান (২৮), ছনুয়া ৬নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আবুল হোসেনের পুত্র নুরুল কাদের ডাকাত (৫৫), ৭নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল খালেকের পুত্র মো. ছরওয়ার আলম (৩০), ৮নম্বর ওয়ার্ডের গোলাম রহমানের পুত্র নাজিম উদ্দীন ডাকাত (৪০), একই এলাকার মৃত নুরুল কাদেরের পুত্র আবদুল হামিদ (২৪), শেখেরখীল ৪নম্বর ওয়ার্ডের মোস্তাক আহমদের পুত্র নুরুল ইসলাম বাদশা (২৮), ছনুয়া ৮নম্বর ওয়ার্ডের মৃত সাজেদ উল্লাহর পুত্র আশেকুর রহমান (৩২), ছনুয়া ৬নম্বর ওয়ার্ডের কাতেবপাড়ার নুরুচ্ছফার পুত্র তোফায়েল আহমেদ (৩৫), ৭নম্বর ওয়ার্ডের নুরুল আলমের পুত্র মো. তৈয়ব (২৩), মৃত শামসুল আলমের পুত্র রাশেদুল মনির (৩৫), মৃত আবদুল খালেকের পুত্র ছৈয়দুল মোস্তফা প্রকাশ (৪৫), হেদায়েত আলীর পুত্র আবদুল হাকিম (৫০), আহমদ আলীর পুত্র আবু সিদ্দিক (৩০), ছনুয়া ৬নম্বর ওয়ার্ডের মৃত ছালেহ আহমদের পুত্র আবুল খায়ের (৩৮), ৮নম্বর ওয়ার্ডের মৃত বশির আহমদের পুত্র এহসানুল করিম (৩৫), মফিজুল করিম (৪৫), ৮নম্বর ওয়ার্ডের মো. ইউনুছের পুত্র জাহেদ সোহান (২৫), ৭নম্বর ওয়ার্ডের মোস্তাক আহমদের পুত্র সিএনজি চালক মফিজ (৩০), সিরাজ মিস্ত্রির পুত্র সিএনজি চালক মুজিব (৩৫), ছনুয়া ৮নম্বর ওয়ার্ডের নুর মোহাম্মদের পুত্র দেলোয়ার হোসেন ওরফে লম্বা মিয়া (৩৬), মৃত কালা মিয়ার পুত্র নুরুল হক (৪০), আবদুল মালেক প্রকাশ বান্ডার পুত্র মো. আজিজ (৩০), মো. রিটন (২৮), নুরুচ্ছফার পুত্র আবদুর রহমান (২৬), মৃত বদিউল আলমের পুত্র শাহাদাত আলম (৩২), ছনুয়া ৭নম্বর ওয়ার্ডের মৃত সাজেদ উল্লাহ ওরফে সাজুর পুত্র মোশাররফ হোসাইন (৩৫), মৃত জাফর আহমদের পুত্র রশিদ আহমদ (৪৫), আবদুর রশিদের পুত্র মো. টিপু (৩৫), মো. ইয়াসিন (৩১), মৃত খলিল আহমেদের পুত্র মোক্তার আহমদ (৫০), ছনুয়া ৭নম্বর ওয়ার্ডের মনজুর আলম (৩৫), মৃত আবদুল জব্বারের পুত্র মো. ইসমাইল (৫৫), ছনুয়া ৯নম্বর ওয়ার্ডের মৃত ছাবের আহমদের পুত্র মো. মহিউদ্দিন (৪৫), ৮নম্বর ওয়ার্ডের হাবিবুর রহমানের পুত্র গোলাম মোস্তফা ওরফে বাইশ্যা (৫২), মীর আহমদের পুত্র হোসাইন (৪৭), আবুল খায়েরের পুত্র মো. ইলিয়াস (৩৫), ৮নম্বর ওয়ার্ডের মৃত নুর মোহাম্মদের পুত্র জাকের হোসেন (৩০), আমির হোসাইন (৩৮), ৯নম্বর ওয়ার্ডের মনজুর আহমদের পুত্র আবদুল মোমেন প্রকাশ মিয়া (৩০), মৃত নজির আহমেদের পুত্র মো. কালু (৪৭) সহ আরো অজ্ঞাত ১০০ থেকে ১৫০ জন।
মামলার অভিযোগে বাদী মো. সাগর উল্লেখ করেন, মামলার বাদী মো. সাগরের পুরো পরিবার রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত। সেই সুবাদে গত ১৫ জুন ইউপি নির্বাচনে ছনুয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মুজিবুর রহমান তালুকদারের পক্ষে কাজ করেন। এতে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী এম হারুনুর রশীদ সাগরের প্রতি ক্ষিপ্ত হন। গত ১৬ জুন আনুমানিক বেলা ১১টায় উল্লেখিত আসামিগণ সহ আরো অজ্ঞাত ১০০ থেকে ১৫০ জন সন্ত্রাসী অস্ত্র, লোহার রড, দা, কিরিচ ও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আবদুল্লাহর দোকান এলাকার রহিমা বেগমের চেম্বারে হামলা করে। এসময় মামলার ১নম্বর আসামি এম. হারুনুর রশীদ ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে অন্যান্য আসামিদের নির্দেশ দেন যে, ২নম্বর আসামি আলমগীর কবির ভুক্তভোগী হামিদকে ধারালো কিরিস দ্বারা মাথায় আঘাত করে ও বাদীর স্ত্রী রহিমা বেগমকে শ্লীলতাহানি করে এবং হাতে থাকা রড দিয়ে কোমরে পিঠে, উভয় হাতে বেধড়ক মারধর করে আহত করেন। ৩ ও ৪নম্বর আসামি রহিমা বেগমের গলায় থাকা ৭০ হাজার টাকা মূল্যের এক ভরি স্বর্ণের চেইন ও ১০ হাজার টাকা মূল্যের একটি মোবাইল সেট ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ৫নম্বর আসামি ভুক্তভোগী ইলিয়াসকে লোহার রড দ্বারা হত্যার উদ্দেশ্য মাথায় আঘাত করেন। ৬, ৭ ও ৮ এবং ৯নম্বর আসামি রহিমা বেগমের দোকানে থাকা ৬৮ হাজার টাকা মূল্যের একটি ল্যাপটপ ও একটি মোবাইল ভাঙচুর করেন এবং ৯নম্বর আসামি ৪৮ হাজার মূল্যের আরেকটি ল্যাপটপ ছিনিয়ে নেয়। ১০, ১১ ও ১২নম্বর আসামি দোকানের ক্যাশ বক্সের তালা ভেঙে এবং বাক্সের টেবিল ভেঙে নগদ ১ লক্ষ ৮ হাজার টাকা নিয়ে যায়। ১৩ থেকে ২০ নম্বর আসামিগণ দোকানে থাকা দুটি আরএফএল টেবিল ও একটি ওয়ারড্রব এবং ঔষধ রাখার দুটি সেলফ ভাঙচুর করেন। ১৩ থেকে ৫০ নম্বর আসামিগণ দোকান ভাঙচুর করে দলবদ্ধভাবে বাদী মো. সাগরের বাড়িতে গিয়ে বাড়িতে পার্কিং করে রাখা একটি মোটরসাইকেল ও ব্যালকনি এবং জানালার গ্লাস ভাঙচুর করে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে নগদ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী মো. সাগর বলেন, ‘ঘটনার পর বাঁশখালী থানায় গিয়ে এজাহার দিলে ওসি প্রধান আসামি হারুনুর রশীদকে বাদ দিয়ে মামলার এজাহার দিতে বলেন। আমি ওসির এমন কথায় রাজি না হয়ে আদালতে মামলা করে আইনের আশ্রয় নিয়েছি। এখন চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ আমাকে চিরতরে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়ায় আমি পরিবার নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।’