নিজস্ব প্রতিবেদক : বিদ্যুতের নাজুক পরিস্থিতিতে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপে বিদ্যুৎ খাত ঘুরে দাঁড়ালেও কতিপয় অসাধু বিদ্যুৎ কর্মকর্তা- কর্মচারীদের অনিয়ম-দূর্নীতির কারণে একদিকে যেমন গ্রাহকদেরকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তেমনি অন্য দিকে সরকার বিরাট অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে। চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে প্রায় ১২শ বাসা-বাড়ি কলকারখানা সহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের মোটা অংকের টাকা যাচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেটে। আর এসব অপকর্মের মূল হোতা হাটহাজারী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম এবং সোহরাব হোছাইন। আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে তারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অবৈধ সংযোগ দিয়ে বাড়তি সুযোগ সুবিধা প্রদান করতেন। জুলাই আন্দোলনে তারা আওয়ামী লীগের অর্থ যোগানদাতা হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী সরকারের পতনের পরেও তারা অজানা কারণে এখনো বহাল তবিয়তে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিদ্যুৎ অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগ সাজশে অধিক মুনাফালোভী ব্যবসায়ী এবং বাসা-বাড়ির মালিকরা অবৈধ সংযোগ নিয়েছেন। হাটহাজারী কলেজ রোডের রফিকুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন, আবুল খায়ের, সরকার হাটের ইয়াকুব, শাহজাহান, হোসেন, পাভেল কোম্পানি, কাঠির হাটের বাবুল হোসেন, আবুল কালাম, হানিফ, হাটহাজারীর বাস স্ট্যান্ডের হাজী সেলিম, জালাল আহমেদ পারভেজ, ভার্সিটি ১ নং গেইটের আরমান হোসেন, ইসলাম উদ্দিন, নন্দির হাটের রুবেল, হোসেন, বেলাল উদ্দিন, বুলবুল আহমেদ, ফতেয়াবাদের এছহাক, আবদুল কাইয়ুম, চৌধুরী হাটের কাজল দাস, সনজয়, বড় দিঘি পাড়ের লিয়াকত আলী, আবদুর রশিদ, শেখ আহমদ, আমান বাজারের পারভেজ, শফি আহমেদ, মিজানসহ আরো অনেকে এমন সংযোগ নিয়েছেন।
এরকম প্রায় ১২শ বাসা-বাড়ি, কল-কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লোক দেখানো মিটার থাকলেও তাদের অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। বিভিন্ন এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও সাংবাদিকদের দেখলে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ কৌশলে সরিয়ে মিটার সংযোগ চালু করে দেয়। এসব অবৈধ সংযোগের সাথে জড়িত কয়েকজনের সাথে পরিচয় গোপন করে গ্রাহক সেজে জানতে চাইলে বলেন, বৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে পুষানো যায় না। চোরাই লাইন ব্যবহার করলে বিলের অর্ধেক টাকাও যায় না। পরে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে জানতে চাইলে কয়েকজন বলেন, তারা প্রতিমাসে বিদ্যুৎ অফিসের লোকদেরকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে সংযোগ চালায়। এসব নিয়ন্ত্রণ করে বিদ্যুৎ অফিসের সহকারী প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম এবং সোহরাব হোছাইন । এসব বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী পর্যন্ত জড়িত তাই সংবাদ প্রকাশ করে কোন লাভ নেই।
আরো জানা যায়, রাশেদুল ইসলামের বাড়ি টাংগাইল জেলায়। সেখানে রয়েছে তার বিলাসবহুল বাড়ি, তিনি তার অবৈধ ঘুষের টাকায় ঝাঁক-জমক ভাবে বিবাহ করার সময় প্রায় ২০ লক্ষ টাকা খরচ করেন এবং তার স্ত্রীকে ২০ ভরি স্বর্ণ প্রদান করেন। কথায় আছে ঘুষের টাকায় সুখ মিলে না। পরবর্তীতে তার স্ত্রী, ঝগড়া বিবাদ করে তাকে তালাক দিয়ে চলে যায়। তার সন্তানরা তাকে পিতা বলে স্বীকার করে না। নামে বেনামে অবৈধ সম্পদের পাহাড় ঘড়ে তুলেছে এই কর্মকর্তা। তিনি বিভিন্ন এলাকাতে বিদ্যুৎ অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলিয়া হুংকার দিয়ে ঘুষ বাণিজ্য করিয়া রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে যান।
এছাড়া সোহরাব হোছাইনের গ্রামের বাড়ী চাঁদপুরের মতলব থানাধীন ছেঙ্গারচর এলাকায়। অবৈধ ইনকামের টাকায় সেখানে তিনি নামে-বেনামে অঢেল সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, হাটহাজারী বিদ্যুৎ অফিসে যোগদানের পর থেকে এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনেক অনিয়মের অভিযোগ হওয়ার পরেও এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তা। এই কর্মকর্তা সাধারণ গ্রাহকদের সাথে অনিয়ন দূর্নীতি করে প্রশ্নের মুখামুখি করেছে বিদ্যুৎ অফিসকে। তাদের অত্যচারে সাধারণ গ্রাহকরা অতিষ্ঠ হয়েছে বলে হাটহাজারীর এলাকাবাসী জানান। এই কর্মকর্তারা অফিসে রাম রাজত্ব কায়েম করেছে। সরকারি চাকরীবিধি অনুযায়ী ২ বছর পর বদলী হওয়ার কথা থাকলেও তারা অজানা শক্তিতে প্রায় ৩ বছরের অধিক সময় একই অফিসে আছেন। হাটহাজারী এলাকার সর্বস্তরের মানুষ তার অত্যচারে অতিষ্ঠ। কারণ বর্তমানে ঘোলাটে রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগে এবং বিদ্যুৎ অফিসের উপরের মহলকে ম্যানেজ করে তাদের কর্ম জীবনের স্বর্ণযুগ পার করেছেন বলে জানা গেছে।
আরো জানা যায়, তারা অবৈধ সংযোগ গ্রহীতাদের নিকট থেকে অবৈধভাবে মাসিক প্রায় ৫ লক্ষ টাকা মাসোহারা নেন। অনেক বৈধ গ্রাহকদেরকে অবৈধ সংযোগ ব্যবহারের তকমা লাগিয়ে নির্দিষ্ট অংকের মাসোহারা দাবী করেন। তাদের সাথে দফারফা না হলে এবং যারা মাসোহারা দেবে না, তাদেরকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বিদ্যুৎ মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করে, অন্যথায় নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এনে তাৎক্ষনিক মামলা দায়ের করে। বিভিন্ন এলাকায় তাদের সোর্স/দালাল নিয়োজিত আছে। এসব দালালরা মাসোহারার টাকা আদায় করেন।
তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, তার অফিসের কর্মচারী চৌধুরী হাট ভুইয়া গাজী বাড়ির নুর আহমদের ছেলে মোহাম্মদ মুসা, চৌধুরীহাটের ইলিক্ট্রিশিয়ান মনির, যোগীরহাটের শহিদ, মিটার রিডার ফটিকছড়ির আমিন বাবু, সিলেটের ফজলুল কাদের।
তারা বিভিন্ন বাসা-বাড়ি, কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে রাশেদের নির্দেশে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে থাকে। এসব অবৈধ সংযোগের ঘাটতি বিলগুলো পাশ্ববর্তী বৈধ সংযোগের ভুতুড়ে বিল বানিয়ে এবং বিভিন্ন অজুহাতে জরিমানাসহ আদায় করে থাকে। তাদের অন্যতম বিশ্বস্থ সহযোগী মুহাম্মদ মূসা ঠান্ডাছড়ি, সেকান্দর কলোনি, সন্দীপ কলোনী, নন্দিরহাট, চৌধুরীহাট, ফতেয়াবাদসহ বিভিন্ন এলাকার ১২২টি বিদ্যুৎ মিটার স্থাপন করবেন বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে জনপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে প্রায় ৩২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। এলাকাবাসী জানান তার অবৈধ টাকায় বিলাসবহুল বাড়ি করেছে। তার অফিসিয়াল কাজ হলো মিটার রিডিং করা এবং বিদ্যুৎ বিল গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
তিনি গ্রাহকদের সাথে টাকার বিনিময়ে অবৈধ ভাবে বিদ্যুৎ লাইন দিয়ে প্রতিনিয়ত অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। এই ধরণের কার্যক্রম বর্তমান হাটহাজারীর নির্বাহী প্রকৌশলীরা কোনোমতে পছন্দ করেন না। তারপরেও সহকারী পরিচালক রাশেদুল ইসলাম এবং সোহরাব হোছাইন ও তাদের সহযোগী মুছাদের খুঁটির জোর নিয়ে প্রশ্ন এলাকাবাসীর। কেন তারা এত বেপরোয়া? ভুক্তভোগীদের অভিযোগ রাশেদ সরকারি কর্মকর্তা হলেও একে মূলত ডাকাতদের সর্দার হিসেবে বলা যেতে পারে। দূর্নীতিতে লিপ্ত রাশেদুল ইসলাম ও তার সহকারী মুহাম্মদ মূসা অপকৌশল হিসেবে বেছে নেন ভিন্ন ভিন্ন পথ। যদি দূর্নীতিতে লিপ্ত থাকা ব্যক্তি হয় একজন বিদ্যুৎ কর্মকর্তা তাহলে সহকারীরা বিদ্যুৎ অফিসের আইন তো হাতের মুঠোয় মনে করবে। তাদের অনিয়ম দূর্নীতি প্রতিরোধে বিদ্যুৎ অফিসের উর্ধতন কর্মকর্তা ও কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন হাটহাজারী অফিসের দিশেহারা জনগণ ও ভুক্তভোগীরা।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী মাঈন উদ্দিন জুয়েল বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই ধরনের কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত থাকার কথা না। অবৈধ সংযোগ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। অপকর্মের সাথে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।